Class 8 বাংলা ব্যাকরণ Chapter 6 সমাস Short Answer Type Questions

প্রিয় ভবিষ্যতের নক্ষত্ররা,
‘WB Institute’ এর পক্ষ থেকে সকলকে জানাই সাদর আমন্ত্রন। আমরা এই পর্বে ক্লাস ৮ বাংলা ব্যাকরণ অধ্যায় ৬ সমাস (Class 8 Bengali Grammar Chapter 6 Samas) – এই বিষয়ের সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন-উত্তর নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

প্রশ্ন:- সমাস কাকে বলে ? উদাহরন সহ লেখো ।

উত্তর:- অর্থের দিক থেকে সম্বন্ধযুক্ত দুই বা তার বেশি পদ অথবা একটি উপসর্গ ও একটি পদ পরস্পর মিলিত হয়ে একপদে পরিণত হলে, তাকে সমাস বলে।
যেমন:— সূর্যের উদয় = সূর্যোদয়।

প্রশ্ন:- সমাস কয়টি ভাগে ভাগ করা হয় ও কী কী ?

উত্তর:- বাংলা ভাষায় মোট আট রকমের সমাসের প্রচলন লক্ষ করা যায়।
যেমন:— [১] কর্মধারয় সমাস, [২] তৎপুরুষ সমাস, [৩] দ্বন্দ্ব সমাস, [৪] বহুব্রীহি সমাস, [৫] দ্বিগু সমাস, [৬] নিত্য সমাস [৭] অলোপ সমাস এবং [৮] বাক্যাশ্রয়ী সমাস।

প্রশ্ন:- সমস্যমান পদ কাকে বলে উদাহরন সহ লেখো ?

উত্তর:- যে পদগুলির সমাস হয় তাদের প্রত্যেকটিকে সমস্যমান পদ বলে।
যেমন:— দলের পতি — দলপতি। এখানে ‘দলের’এবং ‘পতি’-এই পদ দুটি হল সমস্যমান পদ।

প্রশ্ন:- সমস্তপদ বা সমাসবদ্ধ পদ কাকে বলে উদাহরন সহ লেখো ?

উত্তর:- দুই বা ততোধিক সমস্যমান পদ মিলিত হয়ে যে পদ গঠিত হয়, তাকেই সমস্তপদ বা সমাসবদ্ধ পদ বলে।
যেমন:- দলের পতি — দলপতি।

প্রশ্ন:- ব্যাসবাক্য বা বিগ্রহবাক্য কাকে বলে উদাহরন সহ লেখো ?

উত্তর:- সমস্তপদ বা সমাসবদ্ধ পদটির ব্যাখ্যা করার বা অর্থ বিশ্লেষণের জন্য যে বাক্যাংশের প্রয়োগ করা হয় তাকে ব্যাসবাক্য বা বিগ্রহবাক্য বলে।
যেমন:— অজ্ঞাত নয় (অ) জ্ঞাত।

প্রশ্ন:- পূর্বপদ ও উত্তরপদ বা পরপদ কাকে বলে উদাহরন সহ লেখো ?

উত্তর:- ব্যাসবাক্যের প্রথম পদটিকে বলে পূর্বপদ এবং পরবর্তী পদকে বলা হয় উত্তরপদ বা পরপদ
যেমন:— নীল যে আকাশ — নীলাকাশ।

প্রশ্ন:- কর্মধারয় সমাস কাকে বলে ?

উত্তর:- দুটি বিশেষণ অথবা একটি বিশেষ্য, একটি বিশেষণ কিংবা দুটি বিশেষ্য পদের মধ্যে কর্মধারয় সমাসের সাধারণ নিয়মে যে সমাস হয়, তাকে সাধারণ কর্মধারয় সমাস বলে।

প্রশ্ন:- কর্মধারয় সমাস ভাগে ভাগ করা হয় ও কী কী ?

উত্তর:- ৪টি ভাগে ভাগ করা হয় ।
যথা:— (১) উপমিত কর্মধারয় সমাস, (২) উপমান কর্মধারয় সমাস, (৩) রূপক কর্মধারয় সমাস, (৪) মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস ।

প্রশ্ন:- উপমিত কর্মধারয় সমাস কাকে বলে উদাহরন সহ লেখো ?

উত্তর:- যে কর্মধারয় সমাসে উপমেয় এবং উপমান থাকে কিন্তু সাধারণ ধর্মের উল্লেখ থাকে না, তাকে উপমিত কর্মধারয় সমাস বলে।
যেমন:— নর সিংহের ন্যায়—নরসিংহ, পোকা কাচের মতো —কাচপোকা কথা অমৃতের মতো — কথামৃত

প্রশ্ন:- উপমান কর্মধারয় সমাস কাকে বলে উদাহরন সহ লেখো ?

উত্তর:- যে কর্মধারয় সমাসে উপমান এবং সাধারণ ধর্ম থাকে কিন্তু উপমেয়র উল্লেখ থাকে না, তাকে বলে উপমান কর্মধারয় সমাস
যেমন:— বরফের মতো সাদা বরফসাদা, বজ্রের মতো কঠিন —বজ্রকঠিন কুসুমের মতো কোমল — কুসুমকোমল

প্রশ্ন:- রূপক কর্মধারয় সমাস কাকে বলে উদাহরন সহ লেখো ?

উত্তর:- যে কর্মধারয় সমাসে উপমেয় এবং উপমানের মধ্যে তুলনা না করে অভেদ কল্পনা করা হয়, তাকে রূপক কর্মধারয় সমাস বলে।
যেমন:— আশা রুপ লতা — আশালতা সংসার রূপ সাগর — সংসারসাগর মায়া রূপ ডোর — মায়াডোর

প্রশ্ন:- মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস কাকে বলে উদাহরন সহ লেখো ?

উত্তর:- যে কর্মধারয় সমাসে ব্যাসবাক্যের মধ্যে এক বা একের বেশি পদ লোপ পায় তাকে মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস বলে।
যেমন:— সিংহ চিহ্নিত আসন — সিংহাসন

প্রশ্ন:- উপমা কাকে বলে ? উদাহরন সহ লেখো ।

উত্তর:- দুটি ভিন্ন জাতীয় বস্তুর মধ্যে তুলনাকে উপমা বলে।
যেমন:— চাদের মতো মুখ।

প্রশ্ন:- উপমেয় কাকে বলে ? উদাহরন সহ লেখো ।

উত্তর:- যাকে তুলনা করা হয় তাকে বলে উপমেয়
যেমন:- উপরের উদাহরণে ‘মুখ’ উপমেয়।

প্রশ্ন:- উপমান কাকে বলে ? উদাহরন সহ লেখো ।

উত্তর:- যার সঙ্গে তুলনা করা হয় তাকে বলে উপমান
যেমন:— উপরের উদাহরণে ‘চাঁদ’ উপমান।

প্রশ্ন:- সাধারণ ধর্ম কাকে বলে ? উদাহরন সহ লেখো ।

উত্তর:- যে বৈশিষ্ট্য বা গুণের জন্য দুটি বস্তুর মধ্যে তুলনা করা হয়, তাকে বলে সাধারণ ধর্ম। চাঁদ ও মুখের মধ্যে তুলনায় “সৌন্দর্য’ সাধারণ ধর্ম।

প্রশ্ন:- তৎপুরুষ সমাস কাকে বলে ?

উত্তর:- যে সমাসে পূর্বপদে বিভিন্ন কারকের বিভক্তি অথবা অনুসর্গ লোপ পায় এবং পরপদের অর্থ প্রাধান্য পায়, তাকে তৎপুরুষ সমাস বলে।

প্রশ্ন:- তৎপুরুষ সমাসকে কয়টি ভাগে ভাগ করা হয় ও কী কী ?

উত্তর:- তৎপুরুষ সমাসকে ১০ টি ভাগে ভাগ করা হয় ।
যথা:— (১) কর্ম তৎপুরুষ সমাস, (২) করণ তৎপুরুষ সমাস, (৩) নিমিও তৎপুরুষ সমাস, (৪) অপাদান তৎপুরুষ সমাস, (৫) সমৃদ্ধ তৎপুরুষ সমাস, (৬) অধিকরণ তৎপুরুষ সমাস, (৭) একদেশী তৎপুরুষ সমাস, (৮) না-তৎপুরুষ সমাস, (৯) উপপদ তৎপুরুষ সমাস, (১০) ব্যাপ্তি তৎপুরুষ সমাস

প্রশ্ন:- কর্ম তৎপুরুষ সমাস কাকে বলে ? উদাহরন সহ লেখো ।

উত্তর:- যে তৎপুরুষ সমাসে পূর্বপদে কর্মকারকের বিভক্তিচিহ্ন থাকে এবং সমাসবদ্ধ হলে তা লোপ পায়, তাকে কর্ম তৎপুরুষ সমাস বলে।
যেমন:— ঘাসকে কাটা — ঘাসকাটা লোককে ঠকানো লোকঠকানো কলাকে বেচা–কলাবেচা।

প্রশ্ন:- করণ তৎপুরুষ সমাস কাকে বলে ? উদাহরন সহ লেখো ।

উত্তর:- যে তৎপুরুষ সমাসে পূর্বপদে করণকারকের বিভক্তি বা অনুসর্গ থাকে এবং সমাসবদ্ধ হলে তা লোপ পায় তাকে করণ তৎপুরুষ সমাস বলে।
যেমন:— পদ দ্বারা আঘাত – পদাঘাত, ঢেঁকি দ্বারা ছাঁটা — ঢেঁকিছাঁটা লাঠি দ্বারা পেটা লাঠিপেটা।

প্রশ্ন:- নিমিও তৎপুরুষ সমাস কাকে বলে ? উদাহরন সহ লেখো ।

উত্তর:- যে তৎপুরুষ সমাসে পূর্বপদে নিমিত্তকারকের বিভক্তি বা অনুসর্গ থাকে এবং সমাসবদ্ধ হলে তা লোপ পায় তাকে নিমিত্ত তৎপুরুষ সমাস বলে।
যেমন:— শিশুদের নিমিত্ত বিভাগ — শিশুবিভাগ।

প্রশ্ন:- অপাদান তৎপুরুষ সমাস কাকে বলে ? উদাহরন সহ লেখো ।

উত্তর:- যে তৎপুরুষ সমাসে পূর্বপদে অপাদান কারকের বিভক্তি বা অনুসর্গ থাকে এবং সমাসবদ্ধ হলে তা লোপ পায়, তাকে অপাদান তৎপুরুষ সমাস বলে।
যেমন:— মৃত্যু থেকে ভয় —মৃত্যুভয় , জন্ম থেকে অন্ধ — জন্মান্ধ।

প্রশ্ন:- সমৃদ্ধ তৎপুরুষ সমাস কাকে বলে ? উদাহরন সহ লেখো ।

উত্তর:- যে তৎপুরুষ সমাসে পূর্বপদে সম্বন্ধপদের বিভক্তি থাকে এবং সমাসবদ্ধ হলে তা লোপ পায়, তাকে সম্বন্ধ তৎপুরুষ সমাস বলে।
যেমন:— ধানের খেত – ধানখেত।

প্রশ্ন:- অধিকরণ তৎপুরুষ সমাস কাকে বলে ? উদাহরন সহ লেখো ।

উত্তর:- যে তৎপুরুষ সমাসে পূর্বপদে অধিকরণকারকের বিভক্তি থাকে এবং সমাসবদ্ধ হলে তা লোপ পায়, তাকে অধিকরণ তৎপুরুষ সমাস বলে।
যেমন:— গৃহে বাস—গৃহবাস, গোলায় ভরা – গোলাভরা, জলে মগ্ন —জলমগ্ন।

প্রশ্ন:- একদেশী তৎপুরুষ সমাস কাকে বলে ? উদাহরন সহ লেখো ।

উত্তর:- যে তৎপুরুষ সমাসে একদেশবাচক পদের সঙ্গে সমাস হয়, তাকে একদেশী তৎপুরুষ সমাস বলে।
যেমন:- নদীর মাঝ — মাঝনদী, অহ্নের মধ্য — মধ্যাহ্ন, রাত্রির মধ্য — মধ্যরাত্রি প্রভৃতি।

প্রশ্ন:- না-তৎপুরুষ সমাস কাকে বলে ? উদাহরন সহ লেখো ।

উত্তর:- যে তৎপুরুষ সমাসে পূর্বপদ না-বাচক শব্দ এবং পরপদ বিশেষ্য বা বিশেষণ হয় তাকে না-তৎপুরুষ সমাস বলে। (না- তৎপুরুষে না-বাচক শব্দটি ‘নয়’ অর্থে ব্যবহৃত হয়)
যেমন:— নয় ধীর — অধীর নয় সন্তোষ — অসন্তোষ।

প্রশ্ন:- উপপদ তৎপুরুষ সমাস কাকে বলে ? উদাহরন সহ লেখো ।

উত্তর:- উপপদের সঙ্গে কৃৎপ্রত্যয়যুক্ত পদের সমাসকে উপপদ তৎপুরুষ সমাস বলে। (কৃৎপ্রত্যয়যুক্ত পদকে বলে কৃদন্ত পদ। কৃদন্ত পদের আগে যে পদ থাকে, তাকে উপপদ বলে।)
যেমন:— সত্য বলে যে – সত্যবাদী মধুপান করে যে — মধুপ, জাদু করে যে —জাদুকর।

প্রশ্ন:- ব্যাপ্তি তৎপুরুষ সমাস কাকে বলে ? উদাহরন সহ লেখো ।

উত্তর:- ব্যাপ্তি বা সর্বস্থানে রয়েছে বোঝাতে যে তৎপুরুষ সমাস হয়, তাকে ব্যাপ্তি তৎপুরুষ সমাস বলা হয়। (বাংলায় ব্যাপ্তি বোঝাতে আলাদা বিভক্তি নেই)
যেমন:— চিরকাল ব্যাপী বসন্ত — চিরবসন্ত, চিরকাল ব্যাপী সুখী—চিরসুখী, চিরকাল ব্যাপী স্মরণীয় — চিরস্মরণীয়, চিরকাল ব্যাপী শত্রু —চিরশত্রু, ক্ষণকাল ব্যাপী স্থায়ী — ক্ষণস্থায়ী, চিরকাল ব্যাপী যৌবন —চিরযৌবন।

প্রশ্ন:- ক্রিয়াবিশেষণ তৎপুরুষ সমাস কাকে বলে ? উদাহরন সহ লেখো ।

উত্তর:- পূর্বপদ ক্রিয়াবিশেষণের সঙ্গে পরপদের যে তৎপুরুষ সমাস হয়, তাকে ক্রিয়াবিশেষণ তৎপুরুষ সমাস বলে।
যেমন:— আধভাবে পাকা—আধপাকা নিমভাবে রাজি— নিমরাজি – অর্ধভাবে সমাপ্ত — অর্ধসমাপ্ত গাঢ়ভাবে বন্ধ — গাঢ়বদ্ধ।

প্রশ্ন:- উপসর্গ তৎপুরুষ সমাস কাকে বলে ? উদাহরন সহ লেখো ।

উত্তর:- পূর্বপদ উপসর্গের সঙ্গে পরপদের যে তৎপুরুষ সমাস হয়, তাকে উপসর্গ তৎপুরুষ সমাস বলা হয়।
যেমন:— ঘরের অভাব — হাঘর, দিন দিন —প্রতিদিন, প্রতিকূল পক্ষ — প্রতিপক্ষ।

প্রশ্ন:- দ্বন্দ্ব সমাস কাকে বলে ? উদাহরন সহ লেখো ।

উত্তর:- যে সমাসে পূর্বপদ ও পরপদ উভয়ের অর্থই প্রাধান্য পায়, তাকে দ্বন্দ্ব সমাস বলে। ‘দ্বন্দ্ব’ শব্দটির অর্থ হল মিলন বা যুক্ত।
যেমন:— পিতা ও মাতা পিতামাতা হাট ও বাজার-হাটবাজার দ্বন্দ্ব সমাসের কয়েকটি ভাগ লক্ষ করো।

প্রশ্ন:- দ্বন্দ্ব সমাস কয়টি ভাগে ভাগ করা হয় ? ও কী কী ।

উত্তর:- ৮ টি ভাগে ভাগ করা হয় ।
যথা:— [১] দুটি বিশেষ্য পদের দ্বন্দ্ব সমাস, [২] দুটি সর্বনাম পদের দ্বন্দ্ব সমাস, [৩] দুটি বিশেষণ পদের দ্বন্দ্ব সমাস, [৪] দুটি ক্রিয়াপদের দ্বন্দ্ব সমাস, [৫] সমার্থক দ্বন্দ্ব সমাস, [৬] বিপরীতার্থক দ্বন্দ্ব সমাস, [৭] একশেষ দ্বন্দ্ব সমাস, [৮] বহুপদী দ্বন্দ্ব সমাস।

প্রশ্ন:- সমার্থক দ্বন্দ্ব সমাস কাকে বলে ?

উত্তর:- দুটি একই অর্থযুক্ত বা প্রায় একই অর্থযুক্ত পদের মিলন হলে তাকে সমার্থক দ্বন্দ্ব সমাস বলে। যেমন:— বন ও জঙ্গল — বনজঙ্গল ,চালাক ও চতুর — চালাকচতুর ,মাথা ও মুণ্ড — মাথামুণ্ড, ঘর ও বাড়ি – ঘরবাড়ি , ডাক্তার ও বদ্যি — ডাক্তারবদ্যি, কাজ ও কর্ম — কাজকর্ম, জামা ও কাপড় — জামাকাপড়, লজ্জা ও শরম — লজ্জাশরম।

প্রশ্ন:- বিপরীতার্থক দ্বন্দ্ব সমাস কাকে বলে ?

উত্তর:- দুটি বিপরীত অর্থের শব্দের মধ্যে দ্বন্দ্ব সমাস হলে তাকে বিপরীতার্থক দ্বন্দ্ব সমাস বলে।
যেমন:— আকাশ ও পাতাল — আকাশপাতাল, জন্ম ও মৃত্যু — জন্মমৃত্যু, লঘু ও গুরু — লঘুগুরু।

প্রশ্ন:- একশেষ দ্বন্দ্ব সমাস কাকে বলে ?

উত্তর:- দ্বন্দ্ব সমাসে সমাসবদ্ধ পদটি বহুবচন হলে তাকে একশেষ দ্বন্দ্ব সমাস বলে।
যেমন:— আমি তুমি ও সে — আমরা, তুমি ও সে — তোমরা।

প্রশ্ন:- বহুপদী দ্বন্দ্ব সমাস কাকে বলে ?

উত্তর:- যে দ্বন্দ্ব সমাসে অনেকগুলি পদ সমাসবদ্ধ হয়ে একসঙ্গে থাকে, তাকে বহুপদী দ্বন্দ্ব সমাস বলে।
যেমন:— ব্রহ্মা ও বিষ্ণু ও মহেশ্বর — ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বর

প্রশ্ন:- বহুব্রীহি সমাস কাকে বলে ?

উত্তর:- যে সমাসে সমাসবদ্ধ পদে পূর্বপদ বা পরপদ কোনোটিরই অর্থ প্রাধান্য না পেয়ে তৃতীয় কোনো ব্যক্তি বা বস্তুকে বোঝায়, তাকে বহুব্রীহি সমাস বলে ।

প্রশ্ন:- বহুব্রীহি সমাস কয়টি ভাগে ভাগ করা হয় ? ও কী কী ।

উত্তর:- ৭ টি ভাগে ভাগ করা হয়।
যথা:— [১] সমানাধিকরণ বহুব্রীহি সমাস, [২] ব্যধিকরণ বহুব্রীহি সমাস, [৩] মধ্যপদলোপী বহুব্রীহি সমাস, [৪] ব্যতিহার বহুব্রীহি সমাস, [৫] সহার্থক বহুব্রীহি সমাস, [৬] না-বহুব্রীহি সমাস, [৭] সংখ্যা বহুব্রীহি সমাস।

প্রশ্ন:- সমানাধিকরণ বহুব্রীহি সমাস কাকে বলে ? উদাহরন সহ লেখো ।

উত্তর:- যে সমাসে পূর্বপদ ও পরপদ উভয়ে একই বিভক্তিযুক্ত হয়, তাকে সমানাধিকরণ বহুব্রীহি সমাস বলে।
যেমন:— অল্প বুদ্ধি যার — অল্পবুদ্ধি, মা মরা যার — মা-মরা, পাল তোলা যার —পালতোলা, মধ্য বয়স যার — মধ্যবয়সি।

প্রশ্ন:- ব্যধিকরণ বহুব্রীহি সমাস কাকে বলে ? উদাহরন সহ লেখো ।

উত্তর:- যে সমাসে পূর্বপদ ও পরপদ আলাদা বিভক্তিযুক্ত হয়, তাকে ব্যধিকরণ বহুব্রীহি সমাস বলে।
যেমন:— বীণা পাণিতে যার — বীণাপাণি, চন্দ্র চূড়ায় যার —চন্দ্রচূড়, বজ্র পাণিতে যার — বজ্রপাণি, ধর্মে মতি যার —ধর্মমতি।

প্রশ্ন:- মধ্যপদলোপী বহুব্রীহি সমাস কাকে বলে ? উদাহরন সহ লেখো ।

উত্তর:- যে বহুব্রীহি সমাসের ব্যাসবাক্যে এক বা একাধিক মধ্যপদ লোপ পায়, তাকে মধ্যপদলোপী বহুব্রীহি সমাস বলে।
যেমন:— অনেক সময় মধ্যপদলোপী বহুব্রীহি সমাসের দ্বারা উপমা বোঝানো হয় বলে, একে উপমাত্মক বহুব্রীহি সমাসও বলা হয়। কপোতের অক্ষির মতো অক্ষি যার—কপোতাক্ষ লব্ধ হয়েছে প্রতিষ্ঠা যার — লব্ধপ্রতিষ্ঠ।

প্রশ্ন:- ব্যতিহার বহুব্রীহি সমাস কাকে বলে ? উদাহরন সহ লেখো ।

উত্তর:- যে বহুব্রীহি সমাসে একই ধরনের কাজ বারবার বোঝানো হয়, তাকে ব্যতিহার বহুব্রীহি সমাস বলে।
যেমন:— দর নিয়ে যে বিবাদ — দরাদরি, কানে কানে যে কথা- কানাকানি, লাঠিতে লাঠিতে যে যুদ্ধ — লাঠালাঠি, হেসে হেসে যে আলাপ — হাসাহাসি।

প্রশ্ন:- সহার্থক বহুব্রীহি সমাস কাকে বলে ? উদাহরন সহ লেখো ।

উত্তর:- সহিত বা সঙ্গে আছে বুঝিয়ে যে বহুব্রীহি সমাস হয়, তাকে সহার্থক বহুব্রীহি সমাস বলে।
যেমন:— পুত্রের সঙ্গে বর্তমান — সপুত্র।

প্রশ্ন:- না-বহুব্রীহি সমাস কাকে বলে ? উদাহরন সহ লেখো ।

উত্তর:- যে বহুব্রীহি সমাসে পূর্বপদটি না-বাচক হয় এবং ‘নেই’ অর্থে ব্যবহৃত হয়, তাকে না-বহুব্রীহি সমাস বলে।
যেমন:— নেই বোধ যার — নির্বোধ, নেই অন্ত যার — অনন্ত।

প্রশ্ন:- সংখ্যা বহুব্রীহি সমাস কাকে বলে ? উদাহরন সহ লেখো ।

উত্তর:- যে বহুব্রীহি সমাসে পূর্বপদ সংখ্যাবাচক বিশেষণ ও পরপদ বিশেষ্য হয়, তাকে সংখ্যা বহুব্রীহি সমাস বলে।
যেমন:— (একে সংখ্যাবাচক বহুব্রীহিও বলে।) আট চাল যার — আটচালা, সে (তিন) তার যাতে — সেতার।

প্রশ্ন:- দ্বিগু সমাস কাকে বলে ?

উত্তর:- যে সমাসের পূর্বপদ সংখ্যাবাচক বিশেষণ, পরপদ বিশেষ্য এবং সমাহার বুঝিয়ে পরপদের অর্থই প্রধান হয়ে ওঠে, তাকে দ্বিগু সমাস বলে।

প্রশ্ন:- দ্বিগু সমাস কয়টি ভাগে ভাগ করা হয় ? ও কী কী ।

উত্তর:- দ্বিগু সমাস দুইপ্রকার:— [১] তদ্ধিতার্থক দ্বিগু, [২] সমাহার দ্বিগু।

প্রশ্ন:- তদ্ধিতার্থক দ্বিগু কাকে বলে ? উদাহরন সহ লেখো ।

উত্তর:- যে দ্বিগু সমাসে তদ্ধিত প্রত্যয় যোগে পদ গঠিত হয়, তাকে তদ্ধিতার্থক দ্বিগু সমাস বলে।
যেমন:— দ্বি (দুই) মাতার পুত্র — দ্বৈমাতুর, পাঁচ কড়ির বিনিময়ে কেনা —পাঁচকড়ি, (বাংলায় তদ্ধিতার্থক দ্বিগুর উদাহরণ বেশি নেই)।

প্রশ্ন:- সমাহার দ্বিগু কাকে বলে ? উদাহরন সহ লেখো ।

উত্তর:- যে দ্বিগু সমাসে সমাহার বা সমষ্টির অর্থ প্রকাশিত হয় তাকে সমাহার দ্বিগু সমাস বলে।
যেমন:— শত অব্দের সমাহার – শতাব্দী, তিন মাথার সমাহার — তেমাথা, সাত সমুদ্রের সমাহার- সাতসমুদ্র, সপ্ত ঋষির সমাহার – সপ্তর্ষি, নব রত্নের সমাহার — নবরত্ন, পঞ্চনদের সমাহার —পঞ্চনদ।

প্রশ্ন:- নিত্য সমাস কাকে বলে ? উদাহরন সহ লেখো ।

উত্তর:- যে সমাসে সমস্যমান পদগুলি সবসময় বা নিত্য সমাসবদ্ধ থাকে বলে ব্যাসবাক্য দিয়ে অর্থসম্পর্ক বোঝানো যায় না, তাকে নিত্য সমাস বলে।
যেমন:— অন্য দৃশ্য — দৃশ্যান্তর, কেবল কথা — কথামাত্র, অন্য মত — মতান্তর, অন্য দেশ — দেশান্তর।

প্রশ্ন:- অলোপ সমাস কাকে বলে ?

উত্তর:- যে সমাসে পূর্বপদের বিভক্তি লোপ পায় না, তাকে অলোপ সমাস বলে।

প্রশ্ন:- বাক্যাশ্রয়ী সমাস কাকে বলে ? উদাহরন সহ লেখো ।

উত্তর:- কোনো বাক্য বা বাক্যাংশ যখন সমাসবদ্ধ পদ হয়ে ওঠে তখন তাকে বাক্যাশ্রয়ী সমাস বলে। বাক্যাশ্রয়ী সমাসে একাধিক সমাসবদ্ধ পদ থাকতে পারে।
যেমন:— জনগণমনঅধিনায়ক, যাচ্ছেতাই, আন্নকালী (আর না কালী), সবপেয়েছির দেশ প্রভৃতি ।

প্রশ্ন:- সন্ধি ও সমাসের একটি পার্থক্য লেখো।

উত্তর:- সন্ধি ও সমাসের একটি পার্থক্য হল সন্ধিতে বিভক্তি লোপ পায় না কিন্তু সমাসে অধিকাংশ ক্ষেত্রে পূর্বপদে বিভক্তি লোপ পায়।

প্রশ্ন:- সমস্তপদ কাকে বলে ?

উত্তর:- সমাস করার পর যে নতুন পদটি হয় তাকে সমস্তপদ বলে।
যেমন:— বিদ্যার আলয়—বিদ্যালয়, এখানে বিদ্যালয় সমস্তপদ।

প্রশ্ন:- সমস্যমান পদ কাকে বলে ?

উত্তর:- যে ক-টি পদ মিলে সমাস হয়, তাদের প্রত্যেকটিকে সমস্যমান পদ বলে।
যেমন:— বিদ্যার, আলয় — এই পদগুলি হল সমস্যমান পদ।

প্রশ্ন:- ব্যাসবাক্য কাকে বলে ?

উত্তর:- যে বাক্য বা বাক্যাংশ দিয়ে সমস্যমান পদগুলোর অর্থ ব্যাখ্যা করা হয় তাকে ব্যাসবাক্য বলে ।
যেমন:— বিদ্যার আলয়।

প্রশ্ন:- পূর্বপদ কাকে বলে ?

উত্তর:- সমস্যমান পদগুলোর প্রথমটিকে পূর্বপদ বলে।
যেমন:— বিদ্যার আলয়, এখানে বিদ্যা হল পূর্বপদ ।

প্রশ্ন:- উত্তরপদ কাকে বলে ?

উত্তর:- সমস্যমান পদগুলোর পূর্বপদের পরবর্তী পদকে বলা হয় উত্তরপদ
যেমন:— বিদ্যার আলয়ে ‘আলয়’ হল উত্তরপদ।

প্রশ্ন:- উপমিত কর্মধারয় এবং উপমান কর্মধারয় সমাসের একটি পার্থক্য লেখো।

উত্তর:- উপমিত কর্মধারয় সমাসে উপমেয় উপস্থিত থাকে, কিন্তু উপমান কর্মধারয়ে উপমেয় উপস্থিত থাকে না ।

প্রশ্ন:- রূপক কর্মধারয় সমাস বলতে কী বোঝ ?

উত্তর:- যে কর্মধারয় সমাসে পূর্বপদে উপমেয় এবং পরপদে উপমানের মধ্যে অভেদ বা অভিন্নতা কল্পনা করা হয়, তাকে রূপক কর্মধারয় সমাস বলে।
যেমন:— প্রাণপাখি।

প্রশ্ন:- বাক্যাশ্রয়ী ও একশেষ দ্বন্দ্ব সমাসের মধ্যে পার্থক্য কোথায় ?

উত্তর:- বাক্যাশ্রয়ী সমাসে একটি বাক্য বা বাক্যাংশ সমাসবদ্ধ হয় কিন্তু একশেষ দ্বন্দ্ব সমাসে একাধিক পদ সমাসবদ্ধ হয় ।

প্রশ্ন:- একটি উদাহরণের সাহায্যে নিত্য সমাসের বিষয়টি বুঝিয়ে দাও।

উত্তর:- নিত্য সমাসে দুটি পদ সর্বদাই সমাসবদ্ধ থাকে, তাই এর ব্যাসবাক্য হয় না।
যেমন:— দেশান্তর (অন্যদেশ)।

প্রশ্ন:- সংখ্যা বহুব্রীহি ও দ্বিগু সমাসের পার্থক্য কী ?

উত্তর:- সংখ্যা বহুব্রীহি সমাসে সমস্যমান পদগুলি ব্যতীত সম্পূর্ণ অন্য অর্থ প্রাধান্য পায়।
যেমন:— আটচালা (আটটি চাল যার)।

প্রশ্ন:- সমস্যমান পদ কাকে বলে ?

উত্তর:- যে কয়টি পদ মিলে সমাস হয় তার প্রতিটিকে বলা হয় সমস্যমান পদ
যেমন:— পূর্ণ যে চন্দ্ৰ = পূর্ণচন্দ্র। এখানে ‘পূর্ণ’ ও ‘চন্দ্র’ দুটি সমস্যমান পদ ।

প্রশ্ন:- উপমেয় কাকে বলে ?

উত্তর:- তুলনামূলক কর্মধারয় সমাসে যাকে তুলনা করা হয়, সেই পদটিকে বলে উপমেয়
যেমন:— চাঁদের মতো মুখ = চাঁদমুখ। এখানে উপমেয় হল ‘মুখ’।

প্রশ্ন:- ‘সমাস’ ও ‘ব্যাস’ শব্দের অর্থ কী ?

উত্তর:- ‘সমাস’ শব্দের অর্থ হল ‘সংক্ষিপ্ত করা’ এবং ‘ব্যাস’ শব্দের অর্থ হল ‘বিশ্লেষণ’

প্রশ্ন:- উপমান ও উপমিত কর্মধারয় সমাসের একটি করে উদাহরণ দাও ?

উত্তর:- উপমান কর্মধারয় সমাসের উদাহরণ—কাজলের মতো কালো = কাজলকালো।
উপমিত কর্মধারয় সমাসের উদাহরণ:—পুরুষ সিংহের মতো = পুরুষসিংহ।

প্রশ্ন:- ব্যাসবাক্য কাকে বলে? এর অপর নাম কী ?

উত্তর:- যে বাক্য বা বাক্যাংশ দিয়ে সমস্যমান পদগুলির অর্থ ব্যাখ্যা করা হয়, তাকে বলে ব্যাসবাক্য। ব্যাসবাক্যের অপর নাম বিগ্রহবাক্য

প্রশ্ন:- অলোপ সমাস কাকে বলে? দুটি অলোপ সমাসের উদাহরণ দাও।

উত্তর:- (ব্যাসবাক্য-সহ) → সমাসবদ্ধ পদে পূর্বপদের বিভক্তি লোপ না পেয়ে তা যখন সমাসবদ্ধ পদেই থেকে যায়, তখন তাকে অলোপ সমাস বলে।
যেমন:— হাতে ও কলমে = হাতেকলমে (অলোপ দ্বন্দ্ব), মামার বাড়ি = মামারবাড়ি (অলোপ সম্বন্ধ তৎপুরুষ)।

প্রশ্ন:- প্রদত্ত ব্যাসবাক্য দুটির সমাসবদ্ধ পদ নির্ণয় করো ও সমাসের নাম লেখো জায়া ও পতি = ? এবং ভিক্ষার অভাব = ?

উত্তর:- জায়া ও পতি = দম্পতি (দ্বন্দ্ব সমাস) ভিক্ষার অভাব = দুর্ভিক্ষ (উপসর্গ তৎপুরুষ সমাস)।

প্রশ্ন:- আরবসেনাপতি দর্শনমাত্র, সাদর সম্ভাষণ করিয়া, মুরসেনাপতিকে অশ্বপৃষ্ঠে আরোহণ করাইলেন।

উত্তর:- আরবসেনাপতি — আরব দেশীয় সেনাপতি (মধ্যপদলোপী কর্মধারয়), দর্শনমাত্র — কেবল দর্শন (নিত্য), সাদর — আদরের সঙ্গে বর্তমান (সহার্থক বহুব্রীহি), মুরসেনাপতিকে — মুর-জাতীয় সেনাপতি, তাকে — মধ্যপদলোপী কর্মধারয়।

╍╍╍╍╍╍╍╍╍╍ 🌸 ╍╍╍╍╍╍╍╍╍

অনলাইন প্লাটফর্ম ব্যাবহার করা একজন নবীন ছাত্র-ছাত্রি বা তাদের পিতা-মাতার কাছে কিছুটা কঠিন মনে হতে পারে। যাইহোক, এটি মোটেই নয় কারণ আপনি উপরে উল্লিখিত ধাপে ধাপে লেখা উত্তরগুলি অনুসরণ করে এটি সমাধান করতে পারেন।যদি আপনি আপনার সমস্যা থেকে সমাধান না পেয়ে থাকেন তাহলে আমাদের অবশ্যই জানাবেন।

Leave a Comment