শিক্ষাবিস্তারে গণমাধ্যমের ভূমিকা

ভূমিকা:— শিক্ষাই হল যে-কোনো সভ্যতার ধারক এবং বাহক। শিক্ষার মাধ্যমেই মনের বিকাশ ঘটে। তবে শিক্ষার আলো সমাজের প্রতিটি স্থানে ও প্রতিটি স্তরে না পৌঁছোলে শিক্ষা সফল হয় না। সর্বজনীন শিক্ষার অভাবে দেশের উন্নতির যে-কোনো উদ্যোগই ব্যর্থ হয়ে যায়। সমাজের সামগ্রিক বিকাশসাধনের উদ্দেশ্যে গণশিক্ষার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। আর গণশিক্ষা প্রসারের প্রধান অস্ত্রই হল গণমাধ্যম।

বিভিন্ন গণমাধ্যম:— প্রাচীনকালে যখন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির তেমন অগ্রগতি হয়নি, তখন পুথি, পাঠশালা ছাড়াও লোকগাথা, ব্রতকথা, কথকতা প্রভৃতির মাধ্যমে মানুষ নানা ধরনের শিক্ষা লাভ করত। ধীরে ধীরে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নতির ফলে মানুষের জীবনে এল বিভিন্ন উন্নত গণমাধ্যম। তখন থেকে এগুলিই হয়ে উঠল শিক্ষাবিস্তারের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। আধুনিক মানুষের হাতে আজ বিভিন্ন ধরনের গণমাধ্যম রয়েছে। সেগুলির মধ্যে প্রথমেই যার কথা মনে আসে তা হল সংবাদপত্র। এ ছাড়াও রয়েছে বেতার, চলচ্চিত্র, দূরদর্শন, চলভাষ, বিভিন্ন সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং ওয়েবসাইট প্রভৃতি। এইসব গণমাধ্যমগুলি শিক্ষাবিস্তারের পাশাপাশি মানুষের বিনোদনের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

শিক্ষাবিস্তারে সংবাদপত্র:— আধুনিককালে মানুষের জীবনের অতি প্রয়োজনীয় সঙ্গী হল সংবাদপত্র। সংবাদপত্রের মাধ্যমে প্রাপ্ত পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের নানারকম খবরাখবর আমাদের শিক্ষার পরিধিকে বৃদ্ধি করে। শুধু সংবাদ পরিবেশনই নয়, সংবাদেরপাশাপাশি সাহিত্য, শিল্প, বিজ্ঞান প্রভৃতি নানা বিষয়ের সঙ্গেও আমাদের পরিচয় করিয়ে দেয় সংবাদপত্র।

শিক্ষাবিস্তারে বেতার ও দূরদর্শন:— বেতারযন্ত্রের আবিষ্কার বহু মানুষকে একসূত্রে বেঁধে দিতে সক্ষম হয়েছে। ফলে একই অনুষ্ঠান লক্ষ লক্ষ মানুষ একই সঙ্গে বেতারে শুনতে পায়। বেতার সম্প্রচার শোনার ওপর নির্ভর করে বলে নিরক্ষর মানুষও অন্যের সাহায্য ছাড়াই সরাসরি বেতারে সম্প্রচারিত যে-কোনো অনুষ্ঠান বুঝতে পারে। অর্থাৎ শিক্ষাপ্রসারে বেতার একটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। তবে বর্তমান পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী ও উল্লেখযোগ্য গণমাধ্যম হল দূরদর্শন। শিক্ষাপ্রসারের পাশাপাশি মানুষের মনোরঞ্জনের ক্ষেত্রেও এর জুড়ি মেলা ভার। দূরদর্শনের মাধ্যমে বহু মানুষ একইসঙ্গে দেখা ও শোনার সুযোগ পায়। ফলে দূরদর্শনে প্রচারিত যে-কোনো শিক্ষামূলক অনুষ্ঠানই যথার্থ গণশিক্ষা বিস্তারে সাহায্য করে থাকে।

শিক্ষাবিস্তারে চলচ্চিত্র:— শিক্ষাবিস্তারে চলচ্চিত্রের ভূমিকা কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। কাহিনি-চিত্র, তথ্যচিত্র, নিউজ-রিল প্রভৃতি পরিবেশনের মধ্য দিয়েশিক্ষাদানের ক্ষেত্রে এটি একটি উল্লেখযোগ্য মাধ্যম হয়ে উঠেছে।

গণমাধ্যম হিসেবে কম্পিউটার ও ইনটারনেট:— আধুনিক পৃথিবীতে প্রথাগত শিক্ষার পাঠদান পদ্ধতির ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন ঘটেছে। তাই উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলিতে নানাবিধ গণমাধ্যমের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে কম্পিউটার ও ইনটারনেট। ইনটারনেট ব্যবহারের মাধ্যমে চোখের নিমেষে জ্ঞান-বিজ্ঞানের নানা অজানা তথ্য আমাদের হাতের মুঠোয় চলে আসছে। বর্তমান পৃথিবীতে গণমাধ্যম হিসেবে কম্পিউটার ও ইনটারনেট যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে, সে কথা বলাই বাহুল্য।

উপসংহার:— সময়ের সঙ্গে সঙ্গে গণমাধ্যমগুলির পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু সেগুলিকে গণশিক্ষার কাজে যথাযথ প্রয়োগ করা হলেই সমাজের সামগ্রিক উন্নয়ন সম্ভব হবে। গণমাধ্যম আরও দায়িত্বশীল হলে তা শিক্ষাবিস্তারে যুগান্তর এনে দিতে পারে এবং সমগ্র জাতিকে অবক্ষয়ের হাত থেকে মুক্ত করতে পারে।

╍╍╍╍╍╍╍╍╍╍ 🌸 ╍╍╍╍╍╍╍╍╍

আপনি যদি এই পোস্টটি পড়তে পছন্দ করেন এবং এটি সহায়ক মনে করেন দয়া করে এটি আপনার বন্ধুদের এবং পরিবারের সাথে ভাগ করুন। এই পোস্টটি ভাগ করে নেওয়ার জন্য আপনার একটি পয়সাও খরচ হবে না তবে এটি কারও দিন তৈরি করতে পারে।

Leave a Comment