দেশগঠন ও ছাত্রসমাজ

 “এ পৃথিবীকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি 
নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার”

ভূমিকা:— ভারতবর্ষের ইতিহাস গৌরব ও ঐতিহ্যের ইতিহাস। দেশের আলো-বাতাস-মাটির সস্নেহ স্পর্শ আমাদের জীবন গঠন করে। দেশবাসী হিসেবে আমাদেরও দায়িত্ব থেকে যায় দেশকে কিছু ফিরিয়ে দেওয়ার। বিশেষত আজ যারা ছাত্র, তারা দেশের ভবিষ্যৎ নাগরিক। কাজেই ভারতবর্ষকে নবজাতকের বাসযোগ্য একটি আদর্শ দেশ হিসেবে গড়ে তোলার গুরুদায়িত্ব তাদের উপরেই ন্যস্ত।

কুসংস্কারের বিরুদ্ধে লড়াই:— কুসংস্কার হল প্রকৃতপক্ষে অন্ধবিশ্বাস ও ভিত্তিহীন ধারণা। বর্তমান সভ্যতায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রগতি সত্ত্বেও মানুষের মনের অন্ধকার সম্পূর্ণ দূর করা যায়নি। ছাত্রসমাজকে এই কুসংস্কারের বিরুদ্ধে লড়তে হবে। সবার প্রথমে তাদের নিজের মনকে কুসংস্কারমুক্ত করতে হবে। সবকিছুর পিছনে যথাযথ যুক্তি খুঁজে বের করে ভিত্তিহীন ধারণার মূলে আঘাত হানবে তারা। বিজ্ঞানবুদ্ধি দিয়ে অব্যাখ্যাত বিষয়গুলিকে বিচার করতে হবে। প্রয়োজনে রাস্তায় নেমে জনসচেতনতা বৃদ্ধির প্রচেষ্টা চালাতে হবে।

নিরক্ষরতা দূরীকরণ:— দেশের উন্নয়নের প্রধান সোপান দেশবাসীর শিক্ষা। যে দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক নিরক্ষর, সে দেশকে আদর্শ দেশে উন্নীত করা অত্যন্ত কঠিন কাজ। তাই ছাত্রসমাজকেই সাক্ষরতা বৃদ্ধির গুরুদায়িত্ব কাঁধে তুলে নিতে হবে। প্রত্যেক ছাত্র যদি অন্তত একজন নিরক্ষরকে সাক্ষর করার দায়িত্ব নেয়, তাহলে দেশে নিরক্ষরের সংখ্যা দ্রুত কমে আসবে।

পরিবেশ রক্ষায় ছাত্রসমাজ:— ছাত্রজীবন পবিত্র ও নির্মল। ছাত্ররাই পারে দেশের পরিবেশকে মালিন্য থেকে মুক্তি দিতে। স্কুল ও বাড়ির পারিপার্শ্বিক পরিবেশ পরিচ্ছন্ন ও দূষণমুক্ত রাখতে ছাত্রদের ভূমিকা অপরিহার্য। প্রয়োজনবোধে পথসভা, পদযাত্রা, পথনাটিকা ইত্যাদির আয়োজন করে সাধারণ মানুষকে বোঝাতে হবে পরিবেশের পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা কতখানি প্রয়োজন। যত্রতত্র ময়লা ফেলা, কলকারখানার রাসায়নিকমিশ্রিত জলের নদী, পুকুর বা মাটিতে মিশে যাওয়া, প্লাস্টিক ব্যবহার, কলকারখানা ও যানবাহনের দূষিত ধোঁয়া, নির্বিচারে গাছ কাটা, জলের অপব্যবহার, শব্দবাজি ও মাইক্রোফোনের যথেচ্ছ ব্যবহার ইত্যাদি আমাদের বেঁচে থাকাকে ক্রমশ কঠিনতর করে তুলছে। এই দূষণের বিরুদ্ধে লড়াই করে পরিবেশকে বাঁচিয়ে রাখাই ছাত্রসমাজের অন্যতম দায়িত্ব।

স্বাস্থ্যরক্ষায় ছাত্রসমাজ:— বর্তমানে বিজ্ঞান মানুষকে চিকিৎসাব্যবস্থার যে সুযোগসুবিধা দিয়েছে, তা অভাবনীয়। কিন্তু ভারতবর্ষের মানুষ প্রায়শই চিকিৎসার সেই সুবিধা ভোগ করতে পারে না। বিশেষত নানা ধর্মীয় ও সংস্কারগত ধারণা বহু মানুষকে চিকিৎসাশাস্ত্র থেকে দূরে রাখে। যেমন—বসন্ত রোগের চিকিৎসা না করিয়ে মা শীতলার দয়া বলে ফেলে রাখা, জন্ডিসের বিজ্ঞানসম্মত চিকিৎসার বদলে গলায় মালা ইত্যাদি পরানো, সাপে কামড়ালে হাসপাতালের পরিবর্তে ওঝার কাছে ঝাড়াতে নিয়ে যাওয়া ইত্যাদি। মানুষের মন থেকে এসব ভিত্তিহীন সংস্কার দূর করার ক্ষেত্রেও ছাত্রসমাজ বড়ো ভূমিকা নিতে পারে।

উপসংহার:— উপর্যুক্ত বিষয়গুলি ছাড়া দেশ গঠনের আরও কিছু শর্ত রয়েছে, যেগুলি সাহসী ও উদ্যমী ছাত্রসমাজই পারে পূরণ করতে। দেশজুড়ে আজও কালো ছায়া ফেলে রয়েছে জাতিভেদপ্রথা ও সাম্প্রদায়িকতার বিষ। মানুষের মনকে গ্রাস করে ফেলেছে অসততা ও দুর্নীতির পাপ। মূল্যবোধের দ্রুত অবক্ষয় দেশকে উন্নতির পথে এগোতে দেয় না। সুকুমার ছাত্রের দল তাদের কল্যাণস্পর্শে এইসব অভিশাপ দূর করে ভারতবর্ষকে গড়ে তুলতে পারে আদর্শের প্রতিমূর্তি হিসেবে। কিন্তু সেজন্য চাই যথাযথ পরামর্শ, দৃঢ় মনোবল ও কঠিন সংকল্প।

╍╍╍╍╍╍╍╍╍╍ 🌸 ╍╍╍╍╍╍╍╍╍

আপনি যদি এই পোস্টটি পড়তে পছন্দ করেন এবং এটি সহায়ক মনে করেন দয়া করে এটি আপনার বন্ধুদের এবং পরিবারের সাথে ভাগ করুন। এই পোস্টটি ভাগ করে নেওয়ার জন্য আপনার একটি পয়সাও খরচ হবে না তবে এটি কারও দিন তৈরি করতে পারে।

Leave a Comment