আধুনিক জীবনে বিজ্ঞান বনাম কুসংস্কার, অথবা, বিজ্ঞান ও কুসংস্কার – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

ভূমিকা:— অভাবনীয় বৈজ্ঞানিক উন্নতির পাশাপাশি অজস্র কুসংস্কার আজও বহু মানুষের মনের কোণে বাসা বেঁধে আছে। একদিকে চলছে ব্যাপক বিজ্ঞানশিক্ষার আয়োজন, আর অন্যদিকে চলছে কুসংস্কারের তাণ্ডব। একই কালে, একই সমাজে, এমনকি অনেকসময় একই ব্যক্তির মধ্যে বিজ্ঞানশিক্ষা ও কুসংস্কারের প্রাবল্য দেখে অবাক হয়ে যেতে হয়।

বিজ্ঞানের অগ্রগতি ও বৈজ্ঞানিক চেতনা:— যুগে যুগে ছোটো-বড়ো নানা বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে গড়ে উঠেছে আজকের এই আধুনিক সভ্যতা। যে মানুষ একদিন অরণ্যচারী কিংবা গুহাবাসী ছিল, সেই মানুষই আজ পাড়ি জমাচ্ছে গ্রহে-গ্রহান্তরে। আধুনিক বিজ্ঞানের নানান শাখা- উপশাখায় আজ চলছে গবেষণা আর একের পর এক আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হচ্ছে মানুষের উদ্ভাবনী শক্তি।

বিবিধ কুসংস্কারের অস্তিত্ব:— কিন্তু বিজ্ঞানের এত উন্নতি সত্ত্বেও মানুষ আজও প্রকৃত অর্থে বৈজ্ঞানিক চেতনার অধিকারী হতে পারেনি। যথার্থ বৈজ্ঞানিক চেতনার অভাবে আজও আমরা নানান কুসংস্কারের দাস। অন্ধবিশ্বাস, ভ্রান্ত ধারণা ও প্রচলিত লোকাচারের বশবর্তী হয়ে বহু মানুষ এমন অনেক আচরণ করেন যা একেবারেই যুক্তিহীন। যাত্রাকালে হাঁচি বা টিকটিকির ডাককে অনেকে অশুভ মনে করেন। বারবেলা, ত্র্যহস্পর্শ, অমাবস্যা, পূর্ণিমা, চন্দ্রগ্রহণ, সূর্যগ্রহণ প্রভৃতি মেনে চলার প্রবণতা আজও অব্যাহত। ভূতে-পাওয়া বা ভূতে ধরা সম্পর্কে আজও অনেকের বিশ্বাস অটুট। কুসংস্কারবশতই মানুষের চোখে কেউ কেউ ডাইনিতে পরিণত হয়। দুর্বল মানসিকতার ব্যক্তির কাছে তাবিজ-মাদুলি, জলপড়া, নুনপড়ার গুরুত্ব খুবই বেশি। অনেকের কাছে ওষুধ অপেক্ষা দেবতার চরণামৃত বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হয়। সমাজে এইসমস্ত অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কারের অন্ধগলিতে বিপর্যস্ত একুশ শতকের বিজ্ঞান প্রদীপ্ত সভ্যতার আলোকচ্ছটা।

কুসংস্কার দূরীকরণ:— বিজ্ঞানের এই অত্যাধুনিক প্রযুক্তির যুগে দাঁড়িয়ে কুসংস্কারাচ্ছন্ন জনজীবন দেখে একটি কথা মনে বারবার ঘুরে ফিরে আসে—‘তাগা তাবিজ মাদুলি/সভ্য দুনিয়ার শিকলি।’ মানুষের মন থেকে কুসংস্কার দূর করতে হলে মানুষকে বিজ্ঞানমনস্ক করে তোলা দরকার। শুধু বিজ্ঞানের উন্নতি বা বিজ্ঞানশিক্ষা নয়, চাই বৈজ্ঞানিক চেতনা। এমন অনেক মানুষ আছেন যাঁরা পেশাগতভাবে বিজ্ঞানের সঙ্গে যুক্ত হলেও পদে পদে নানান কুসংস্কার মেনে চলেন। আসলে বিজ্ঞানকে তাঁরা পেশার ক্ষেত্রেই আবদ্ধ করে রেখেছেন, মন থেকে গ্রহণ করতে পারেননি। তাই শিক্ষিত অশিক্ষিত নির্বিশেষে সকলের মধ্যেই বৈজ্ঞানিক চেতনা জাগানোর চেষ্টা করতে হবে। এ ব্যাপারে অবশ্য কিছু কিছু প্রচেষ্টাও শুরু হয়েছে। গঠিত হয়েছে ‘জনবিজ্ঞান জাঠা’, দেশ জুড়ে বিজ্ঞানচেতনা প্রসারের চেষ্টা চলছে। কুসংস্কার দূরীকরণের জন্য বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষিত ব্যক্তিদের আরও বেশি উদ্যোগী হওয়া প্রয়োজন। 

উপসংহার:— বিজ্ঞান যদি মানুষের মনের অন্ধকার দূর করতে না পারে, তাহলে বড়ো বড়ো আবিষ্কারের ক্ষেত্রে তার যত অবদানই থাকুক না কেন, সব অর্থহীন হয়ে যায়। বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি তখনই সার্থকতা লাভ করবে যখন মানুষ বিজ্ঞানকে গ্রহণ করবে মনেপ্রাণে, বৈজ্ঞানিক চেতনার আলোকে হয়ে উঠবে কুসংস্কারমুক্ত।

╍╍╍╍╍╍╍╍╍╍ 🌸 ╍╍╍╍╍╍╍╍╍

যদি সমস্যাটি এখনও বিদ্যমান থাকে তবে নির্দ্বিধায় আমাকে জানান। আমি আরো গবেষণা সঙ্গে আপনার সমস্যা সমাধান করার জন্য আমরা আরো সহজভাবে যথাসাধ্য তোমাদের বা আপনাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করবো ।

Leave a Comment