▶ ভূমিকা:— ছোটোবেলায় যুক্তাক্ষর চিনতে শেখার কিছুদিন পর হাতে পেয়েছিলাম ‘ঠাকুরমার ঝুলি’। মা-ঠাকুমার মুখে শোনা রাক্ষস-খোক্কস- রাজপুত্তুরের দেশ তখন ছবি আর লেখায় আরও জীবন্ত। বই পড়া শুরু সেই থেকে। এরপর বই পড়ার নেশা ক্রমেই বাড়তে থাকে। কিছু বই পড়েছি, অনেক অনেক পড়া বাকিও। তবু তার মধ্যেই যে বইটি আমার মনকে ভীষণভাবে ছুঁয়ে গেছে সেটা হল বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিখ্যাত উপন্যাস পথের পাঁচালী।
▶ কাহিনি বিশ্লেষণ:— পথের পাঁচালী মূলত আত্মজীবনীমূলক উপন্যাস। অপু এই উপন্যাসের প্রাণ। অন্তর্মুখী অপু প্রকৃতিকে ভালোবাসে। আর তার দিদি বহির্মুখী দুর্গা তার প্রকৃতিপ্রেমের দোসর। এরা নিশ্চিন্দিপুরের প্রকৃতির সঙ্গে একাত্ম হয়ে গেছে। হরিহর- সর্বজয়ার দুঃখের সংসারে অপু-দুর্গা বেড়ে উঠেছে। বঞ্চিত, অবহেলিত ইন্দিরা ঠাকরুণ জীবনের নানা দুঃখযন্ত্রণার ভারে যেন জড়পদার্থে পরিণত হয়েছিলেন। নানা খুঁটিনাটির মধ্য দিয়ে বিভূতিভূষণ তাঁর এই রচনায় দারিদ্র্যকে ফুটিয়ে তুলেছেন।
▶ রচনাবৈশিষ্ট্য:— পথের পাঁচালী গ্রন্থটির প্রধান বৈশিষ্ট্য প্রকৃতির সঙ্গে শিশুমনের নিবিড় যোগাযোগ। শিশু অপু-দুর্গা প্রকৃতির হাতছানিকে পড়ে নিতে পারে। আর এ কথা চরমভাবে উপলব্ধ হয়, যখন ঝড়বৃষ্টির আনন্দ উপভোগ করার ফলে অসুখে ভুগে মারা যায় দুর্গা। ছোট্ট অপুর মন সব শিশুরই কোমলমনের প্রতিচ্ছবি। কলমি শাক, আমের কুসির গ্রামবাংলা আর সেখানকার সরল, নিষ্পাপ মানুষগুলোর কথা বিভূতিভূষণের লেখনীতে নিখুঁতভাবে ফুটে উঠেছে। যদিও উপন্যাসটি লেখকেরই ব্যক্তিগত জীবনের কাহিনি, তাঁরই শৈশবকালের স্মৃতি, তবুও উপন্যাসটি পড়লে মনে হয় যেন তা অনেকের জীবনের কথা, অনেকের মর্মব্যথা।
▶ প্রিয় কেন:— যখনই বইটা পড়ি নিশ্চিন্দিপুরের মেঠো রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে অপু-দুর্গার মধ্যে নিজেকেই খুঁজি আমি। মনে হয় এই কাহিনি আমার জীবনেরই সুখ-দুঃখের ইতিকথা। মনখারাপ মেশানো একটা ভালো লাগা বইটা শেষ করার অনেকক্ষণ পরেও জড়িয়ে থাকে আমাকে।
▶ উপসংহার:— বিভূতিভূষণের রচনাভঙ্গি, উপন্যাসের কাহিনি, সর্বোপরি অপুর শিশুমন আমাকে টানে। তাই উপন্যাসটি আমার এত প্রিয়।
╍╍╍╍╍╍╍╍╍╍ 🌸 ╍╍╍╍╍╍╍╍╍
এই পোস্টে প্রশ্ন উত্তর সহ আলোচনা করা হলো। তোমাদের অসুবিধা হলে তোমরা এই পোস্টের সাহায্য নিতে পারো। উত্তর গুলি খাতায় করার আগে অবশ্যই মন দিয়ে দেখে তারপর খাতায় করবে।