বইমেলা – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

ভূমিকা:— সভ্য মানুষের জীবনের অপরিহার্যরূপে জড়িয়ে গেছে, বই। লিপি আবিষ্কারের পর থেকে মানুষ তার অর্জিত জ্ঞান, অভিজ্ঞতা কিংবা অনুভূতিগুলিকে ধরে রাখতে চেয়েছে বইয়ের মধ্যে। ক্রমে ক্রমে বইয়ের মুদ্রণ এবং প্রকাশনার ক্ষেত্রে অনেক সমৃদ্ধি ঘটেছে। গড়ে উঠেছে ছোটো- বড়ো অজস্র গ্রন্থাগার, বই নিয়ে বিশ্বব্যাপী বাণিজ্যেরও একটি ঐতিহ্য গড়ে উঠেছে। সংস্কৃতি, জ্ঞানচর্চা আর বাণিজ্যের সেই মেলবন্ধনেই সৃষ্টি হয়েছে বইমেলার।

বইমেলার উদ্দেশ্য:— বইমেলার প্রথম উদ্দেশ্য হল, প্রকাশক এবং পাঠকের মধ্যে প্রত্যক্ষ একটি সংযোগ গড়ে তোলা। প্রকাশকরা পাঠকসমাজের প্রবণতা ও চাহিদা উপলব্ধি করার সুযোগ পান বইমেলায়। অন্যদিকে পাঠকরাও প্রকাশকদের মুখোমুখি হওয়ার সুযোগ পান। দ্বিতীয়ত, পাঠকরা বিভিন্ন স্টলে ঘুরে ঘুরে নিজেদের রুচি ও পছন্দ অনুযায়ী বই বাছাই করতে পারেন। যে বইয়ের কথা কোনোদিন হয়তো জানা যেত না সেইরকম কোনো প্রয়োজনীয় বইও হয়তো এখানে পেয়ে যেতে পারেন কোনো পাঠক। তৃতীয়ত, বইমেলা মানুষকে বই পড়তে ও বই ভালোবাসতে শেখায়। পুস্তকপ্রেম সমাজকে সুস্থ রাখার পক্ষে বিশেষ সহায়ক। রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, ‘একটা সভা উপলক্ষ্যে যদি দেশের লোককে ডাক দাও, তবে তাহারা সংশয় লইয়া আসিবে, তাহাদের মন খুলিতে অনেক দেরি হইবেঃকিন্তু মেলা উপলক্ষ্যে যাহারা একত্র হয় তাহারা সহজেই হৃদয় খুলিয়াই আসেঃসূতরাং এইখানেই দেশের মন পাইবার প্রকৃত অবকাশ ঘটে। বইমেলা সম্পর্কেও এই কথা প্রযোজ্য। বইমেলাতেই দেশের পাঠকসমাজের মন পাওয়ার প্রকৃত অবকাশ ঘটে।

পশ্চিমবঙ্গে বইমেলা:— পশ্চিমবঙ্গে বইমেলা বলতেও প্রথমেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে কলকাতা বইমেলার ছবি। কলকাতায় বইমেলার সূচনা হয় ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দে। প্রকাশক এবং পুস্তক বিক্রেতাদের প্রচেষ্টায় শুরু হয় এই মেলা। ২০০০ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা বইমেলার রজতজয়ন্তী বর্ষ উদ্যাপিত হয়। প্রতি বছর শীতকালে, মোটামুটিভাবে ২৫ জানুয়ারি থেকে ৬ ফেব্রুয়ারির মধ্যে এই মেলা অনুষ্ঠিত হয়। ছোটো-বড়ো-মাঝারি সবরকম প্রকাশনা সংস্থা হাজির থাকে এই মেলায়। ভিন্ন দেশের প্রকাশকরাও আসেন। আর আসেন দেশের নানান প্রান্ত থেকে পুস্তকপ্রেমিক মানুষ। তবে বইমেলা কেবল আর কলকাতাতে সীমাবদ্ধ নেই, বইমেলা ছড়িয়ে পড়েছে পশ্চিমবঙ্গের প্রত্যেকটি জেলায়। এখন প্রতি বছর জেলায় জেলায় একটি বড়ো উৎসব হল বইমেলা।

বইমেলার সাফল্য:— জেলা বইমেলা এবং কলকাতার বইমেলায় গ্রন্থপ্রেমী মানুষের ভিড় উপচে পড়ে। বইমেলায় এই স্বতঃস্ফূর্ত জনসমাগম বইমেলার সাফল্যের কথাই বারবার স্মরণ করিয়ে দেয়। বইমেলাও মানুষের একটি মহামিলনের ক্ষেত্র। এখানে জাতি-ধর্ম-বিত্ত নির্বিশেষে মানুষ মিলিত হয়। এখানে একাকার হয়ে যায় গ্রাম শহর।

উপসংহার:— মন ও মননের চর্চার উপযুক্ত সঙ্গী বই। বই মানুষের পরম বন্ধু। মানুষের শিক্ষা ও সংস্কৃতির উৎকৃষ্ট নিদর্শন এই বইকে নিয়ে মেলার আয়োজন নিঃসন্দেহে মানুষের প্রগতিশীলতার পরিচায়ক। মানুষ আলোকপথের যাত্রী। অজ্ঞানতার অন্ধকার ভেদ করে সে পেতে চায় জ্ঞানের আলো। বইমেলা তার অন্যতম ইন্ধন।

╍╍╍╍╍╍╍╍╍╍ 🌸 ╍╍╍╍╍╍╍╍╍

প্রিয় ছাত্র- ছাত্রীরা উপরের এর সম্পূর্ণ ভাবে প্রশ্ন-উত্তর সহ আলোচনা করা হয়েছে। আশা রাখছি তোমাদের বা আপনাদের অনেকখানি সহায়তা করতে পেরেছি। পোস্টটি ভালো লেগে থাকলে অন্যদের শেয়ার করে তাদের সহায়তা করো বা করুন।

Leave a Comment