▶ ভূমিকা:— মানুষের শ্বাসপ্রশ্বাস, বেঁচে থাকার সঙ্গে যোগ রয়েছে গাছের। অতিপ্রাচীন কালে যখন কৃষিভিত্তিক সংস্কৃতির চল ছিল তখন গাছকে দেবতা হিসেবে পুজো করা হত। তপোবনের শিক্ষায় অরণ্য-প্রকৃতির ওপরে মানুষের নিশ্চিন্ত নির্ভরতারই প্রকাশ ঘটেছে। পুরাণের ঋষিরা বৃক্ষবন্দনায় বৃক্ষের অবদানেরই স্বীকৃতি জানিয়েছেন। গাছ মানুষকে আশ্রয় দেয়, দেয় খিদে মেটাবার উপকরণ। জোগান দেয় শ্বাসপ্রশ্বাসের প্রয়োজনীয় অক্সিজেন। জ্বালানি থেকে শুরু করে বাড়ি তৈরি কিংবা আসবাবপত্র সবেতেই গাছের অসীম অবদান । আবার এই গাছ বা অরণ্য পশুপাখিদের নিশ্চিত আবাসস্থল হয়ে রক্ষা করে জীববৈচিত্র্য, গাছ ভূমিক্ষয় রোধ করে, পৃথিবীতে বৃষ্টিপাতের পরিমাণকে নিয়ন্ত্রণ করে। অরণ্য ঝড়ের গতিবেগকে নিয়ন্ত্রণ করে, মরুভূমির সম্ভাবনাকে ব্যাহত করে। মানুষের জীবন ও জীবিকার সঙ্গে গাছের ঘনিষ্ঠ যোগ। অর্থের লোভে প্রকাশ্যে বা গোপনে নির্বিচারে চলছে অরণ্যধ্বংস।
▶ বন্ধু হারানোর বেদনা:— সভ্যতার গর্বে উন্মত্ত মানুষেরা মনে রাখেনি গাছেদের অবদান। তাই নগরায়ণের তীব্র নেশায় তরাই থেকে সুন্দরবন—সর্বত্র চলছে অরণ্য ধ্বংসের যজ্ঞ। এই অনন্ত লোভ আসলে নিশ্চিত করছে মানুষের সভ্যতার ধ্বংসকেই। বেড়ে যাচ্ছে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা। মেরুপ্রদেশের বরফ গলে যাচ্ছে, বেড়ে যাচ্ছে পৃথিবীর জলস্তর, নষ্ট হচ্ছে জীববৈচিত্র্য—গাছপালা কমে যাওয়ায় অতিবেগুনি রশ্মির স্বচ্ছন্দ আগমন নানারকম অসুখবিসুখ ডেকে আনছে। বন্ধু হারানোর বেদনা পৃথিবীকে শূন্য করে তোলে। বিশেষজ্ঞদের মতে, কোনো দেশের আয়তনের তুলনায় ভূভাগের পরিমাণ যখন ৩৫ শতাংশের নীচে নেমে যাবে তখনই সেই দেশ বিপর্যয়ের মুখোমুখি হবে। ভারত-সহ পৃথিবীর বহু দেশই এখন এই সমস্যায় চিন্তিত।
▶ তোমার কাছে আমার হৃদয়:— রবীন্দ্রনাথ শান্তিনিকেতনে বনমহোৎসবের আয়োজন করেছিলেন। ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দ থেকে সরকারি স্তরে এই ‘বনমহোৎসব’-এর আয়োজন করা হচ্ছে। রাষ্ট্রসংঘ ২১ মার্চ দিনটিকে ‘বনদিবস’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। অরণ্যসংরক্ষণ ও বৃক্ষরোপণের পক্ষে জোরদার লড়াই করছেন বিশ্বজুড়ে পরিবেশবাদী সংগঠনগুলি। বিভিন্নরকম দূষণ ও গাছকাটা, জলাভূমি বোজানো ইত্যাদির বিরুদ্ধে গর্জে উঠছে সাধারণ মানুষ।
▶ উপসংহার:— সব শেষে বলা যায়, ‘একটি গাছ, একটি প্রাণ’—এই বাক্যকে নিছক স্লোগান নয়, করে তুলতে হবে জীবনযাপনের অনিবার্য শর্ত। আর তাহলেই তৈরি হবে আগামী প্রজন্মের জন্য পৃথিবীর এক গভীর এবং মানবিক মুখ ।
╍╍╍╍╍╍╍╍╍╍ 🌸 ╍╍╍╍╍╍╍╍╍
অনলাইন প্লাটফর্ম ব্যাবহার করা একজন নবীন ছাত্র-ছাত্রি বা তাদের পিতা-মাতার কাছে চ্যালেঞ্জের মতো মনে হতে পারে, তাই আমরা এর পুরোটাই অতি সহজে এবং সম্পূর্ণ ভাবে প্রশ্ন উত্তর সহ আলোচনা করা হয়েছে। আমরা কি আপনার পরিস্থিতির সমাধান করেছি – নাকি আপনি অন্য কিছু ব্যবস্থা অনুসরণ করছেন? আমাদের অবশ্যই জানাবেন।